সিলেট, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় বাস্তুহারা বানভাসি মানুষের মাঝে খাবারের জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার।
বুধবার পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জে ওএমএসের চাল বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলহারা কৃষকের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (ত্রাণ) মো. ইফতেখারুল ইসলাম জানান, সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এ পর্যন্ত এক হাজার ১শ’ টন চাল এবং নগদ ১২ লাখ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ চালের ৭০০ টন সিলেট, ২০০ টন মৌলভীবাজার এবং ১০০ টন করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিলেট জেলার জন্য ১০ লাখ ও মৌলভীবাজার জেলার জন্য দুই লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৪ টন চাল ও এক কোটি ৯ লাখ টাকা।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের তেরা মিয়ার স্ত্রী সাজু বেগম ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভোট আইলে হখলেউ লাম্বা মাত মাতইন, আর মাইনষরে লাখ লাখ টেকা দেইন। অতো দিন ধরি পানির মাঝে আছি আর অখন আইছইন ফটো তুলবার লাগি। ফটো তুললে কিতা পেট ভরবোনি।’
ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত দেড় লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষের জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৮ টন চাল ও নগদ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টন চাল ও নগদ ৩৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ খাদ্য সংকটে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটালেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ৮টি ইউনিয়নে মাত্র ১৭শ’ জন বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণের চাল ও টাকা বিতরণ করা হয়।
হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রাম। বন্যাকবলিত এ গ্রামের মানুষ বুধবার পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি। এ গ্রামের বাসিন্দা সাহেরা বেগমের অভিযোগ, বন্যায় বাড়িঘর ডুবে মানবেতর জীবনযাপন করছি অথচ কোনো ত্রাণ পাইনি। একই গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, বন্যার্তদের ত্রাণ দেয়ার কথা শুনছি কিন্তু আমরা তো কিছুই পেলাম না।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মাইকিং করে ডেকে নেয়ার পরও ত্রাণ দেয়া হয়নি। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মঙ্গলবার ফরিদপুর স্কুলে ত্রাণ দেন, তা আমরা পাইনি। অনেক মানুষ ত্রাণ না পেয়ে ফিরে গেছেন।
হাকালুকি হাওরপারের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়ার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। অধিকাংশ লোক পাচ্ছেন না সরকারি ত্রাণসামগ্রী। আর যা বিতরণ করা হচ্ছে তাতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের লোকদের মধ্যে তা বিতরণ করছেন।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের বন্যাকবলিত কাড়েরা গ্রামের ত্রাণবঞ্চিত যগেশ দাস ও প্রণতি দাস এমন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার বিএনপির। ত্রাণ চাইতে গেলে তারা আমাদের উল্টো ধমক দেন। তাদের দাবি, মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পছন্দের লোকজনই কেবল পাচ্ছে ত্রাণ।
অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও। ২ জুলাই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসে। এরপর জয়চণ্ডী ইউনিয়নের পুশাইনগর বাজারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সেখানে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। এসব মানুষের মাঝে বিএনপি সমর্থিতদের ত্রাণ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
