কলকারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে । একই সাথে বাড়ছে নিহত আর আহতের সংখ্যা। অভিযোগ নিয়মিত পরিদর্শন না হওয়ার কারণেই বাড়ছে বয়লার সংক্রান্ত দুর্ঘটনার সংখ্যা। কিন্তু বয়লার পরিদর্শন অধিদপ্তর বলছে, স্বল্প জনবল দিয়ে সারা দেশের কলকারখানার বয়লার ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর বলছে, বয়লার পরিদর্শন দপ্তরটির লোকবল আর পরিদর্শন ও সমন্বয় বাড়ানো না গেলে বয়লার বিস্ফোরণের ঝুঁকি আরো বাড়বে।
গত বছর টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহত হন ২৩ জন শ্রমিক। আহত হন অন্তত ৭৪ জন।
গত সোমবার গাজীপুরের মালটিফ্যাবস গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩ জন শ্রমিক। আহত ৪০ জন। কারণ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ বয়লার চালু রাখাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বয়লার বিস্ফোরণ যে কোন বিস্ফোরক থেকেও বেশি ক্ষতিকর। আর এসব বয়লার বিস্ফোরণ বেশিরভাগ সময় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে।
সিভিল ডিফেন্স অ্যান্ড ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘এটা বোমার চেয়েও আরো বেশি ভয়ঙ্কর। যে রুমগুলোতে বয়লার থাকবে সেটাতে কিন্তু ফোর আওয়ারস রেটেড ওয়াল থাকবে। সে ওয়ালগুলো কিন্তু ইটের থাকবে না। ইট থাকলে সেগুলো স্প্লিন্টারের মতো কাজ করবে। সেখানে দেখা যায়, সচেতনতার অভাব।’
প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে বয়লার বিস্ফোরণ নিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও, তারা জানান দেশে এখন প্রায় ৫ হাজার ৫শ টি বয়লার চালু রয়েছে। আর বৈধভাবে চালু বয়লারের মধ্যে আটশোর মতো মেয়াদোত্তীর্ণ। যার মধ্যে গত জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৫০০টির। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি পরিচালনায় আছেন মাত্র ৬ জন পরিদর্শকসহ মোট ১০ জন কর্মকর্তা। এই জনবল দিয়েই পুরো বাংলাদেশের শিল্পকারখানাগুলোর বয়লার পরিদর্শনের কাজ চলছে।
দপ্তরটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১টি ও ২০১৭ সালে তিনটি বয়লার দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য অনুমোদিত চাপের চেয়ে অতিরিক্ত চাপে চালানোকে দুর্ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ বলেও লিখিত বক্তব্যে জানান তারা।
এদিকে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর বলছে, বয়লার পরিদর্শন বিভাগকে শক্তিশালী না করলে কলকারখানায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়।
কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রধান মহা-পরিদর্শক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘কারখানার নিরাপত্তার সকল কিছু দেখার দায়িত্ব কারখানা কর্তৃপক্ষের। শুধুমাত্র বয়লার ছাড়া। এই বিভাগকে যেমন ২০১৪ সালের পর থেকে শক্তিশালী করা হয়েছে এবং হচ্ছে সেই ভাবে বয়লার বিভাগকেও ওই পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিৎ। কারণ এখন দেখা যাচ্ছে যে, কারখানার অন্যান্য বিষয়গুলোর নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি কিন্তু বয়লারটা পারছি না।’
এছাড়া শিল্প কলকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মত তাদের।-সময় টিভি
