ব্যাকটেরিয়াজাতীয় জীবাণু ক্রমেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে রক্তে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। এটি ঘটে যখন দেহের কোনো একটি অংশের সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এসব সংক্রমণের চিকিৎসায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক।
সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্যই এমনটি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এমন দিন আসবে, যেদিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজেই আসবে না।
প্রতিষ্ঠানটির ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইম্যুনোলজি বিভাগের প্রধান ড. দিলরুবা আহমেদ দশ বছরের বেশি সময় ধরে এ গবেষণা করছেন। গবেষণার প্রয়োজনে তিনি এ পর্যন্ত এক লক্ষাধিক রক্তের নমুনা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এসব রক্তের নমুনায় তিনি জীবাণুর উপস্থিতি এবং এসব জীবাণুর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করেছেন।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব রক্তে জীবাণু ব্যাপক মাত্রায় ওষুধ প্রতিরোধী (অ্যান্টিবায়োটিক) হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে গবেষণা সংক্রান্ত এসব ফল বিএমসি জার্নাল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অ্যান্ড ইনফেকশন কনট্রোলে প্রকাশিত হয়েছে।
ড. দিলরুবা আহমেদ বলেন, কেউ যদি এসব অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বন্ধ করে দেন তাহলেও ব্যাকটেরিয়া তাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। তারা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হিসেবে থেকে যাবে। ফলে এসব ওষুধ রোগীদের জন্য ভবিষ্যতে আর কাজ করে না।
তিনি আশা করেন, এই গবেষণা প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারসহ (চেম্বারে যেসব ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেন) স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের রোগীদের জন্য ব্যবস্থাপত্র লেখার ক্ষেত্রে সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং তার যথাযথ প্রয়োগ এই সমস্যা লাঘবে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ব্যাকটেরিয়াজাতীয় জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এমন দিন আসবে, যেদিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদের পাশে শোকেস ভর্তি অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে। কিন্তু কোনোটিই তাদের কাজে আসবে না। ওষুধের দিকে তাকিয়ে থেকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে।
আইসিডিডিআরবির মূল দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকার, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (জিএসি), সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা) এবং ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউকেএইড) অর্থায়নে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬ সালের শুরুর দিকে একটি বিশ্ব কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় পর্যায়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তার জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। এটি মানুষ ও পশুর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
আইসিডিডিআরবির সহযোগী সায়েন্টিস্ট এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিলেন্স অব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের সদস্য ড. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনও অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রোগজীবাণুর প্রতিরোধী ভূমিকা সংক্রান্ত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। তিনি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে একটি ওয়ান হেলথবিষয়ক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের আহবান জানান।
ড. আমিন বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজন রোগজীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা সংক্রান্ত একটি উন্নততর জরিপ ব্যবস্থা, মানসম্মত ওষুধের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কিত বিধিমালা এবং ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব সংক্রান্ত শিক্ষা।
