টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার অর্ধেকের বেশি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার অর্ধেকের বেশি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কুশিয়ারার পানি কমায় সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা জাগলেও ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় যমুনা তীরে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে। আর উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে দেশের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শুক্রবার বহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে সুরমা-কুশিয়ারার পানি কমছে।
“যমুনার পানি বৃদ্ধির ধারা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। উজানে আজ বৃষ্টি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ফলে যমুনা-বহ্মপুত্রের বিভিন্নি পয়েন্টে পানি ততটা বাড়েনি। তবে আগামী কয়েকদিন উজানে বৃষ্টির আভাস থাকায় এখানেও পানি বাড়বে; এটাই উদ্বেগের।”
দেশের নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে শুক্রবার সাতটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩২টি পয়েন্টে।
যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পয়েন্টে পানির উচ্চতা শুক্রবার ৪ থেকে ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট, সিলেট পয়েন্টে ও কুশিয়ারার সিলেট-শেরপুর, অমলশীদ ও শেওলা পয়েন্টে পানি কমেছে। কংশ নদীর জারিয়াজঞ্জাইল পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে বয়ে গেলেও শুক্রবার উচ্চতা আর বাড়েনি। মাতামুহুরি ও হালদায় পানি কমা অব্যাহত রয়েছে।
যমুনার পানি বাড়ায় জেলার চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
আর কয়েকদিনের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর উড়িয়া, কাতলামারী ও নামাপাড়া এলাকায় অন্তত ৫০টি পরিবার গত এক সপ্তাহে নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন বলে আমাদের গাইবান্ধার প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
আগামী সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ ধরনের বন্যা অস্বাভাবিক নয়। গত বছরও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের পর তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে দুই দফা ভারি বর্ষণে উজানে ঢল নামে। তাতে দেশের ১৬টি জেলার ৫৯টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়।
প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে ভারিবর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে গড়ে দেশের ২০-২৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয় বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য।
তবে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত দেশে ও উজানে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র একসঙ্গে ফুঁসে উঠলেই বন্যা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
