Home 20 জাতীয় 20 চিকুনগুনিয়ায় মুক্তি পেতে মসজিদে মসজিদে মোনাজাত

চিকুনগুনিয়ায় মুক্তি পেতে মসজিদে মসজিদে মোনাজাত

দেশের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এবার যেরকম হারে চিকনগুনিয়া রোগ ছড়িয়েছে, তা সাম্প্রতিককালে আর দেখা যায়নি। খরর বিবিসি বাংলার।
ইন্সটিটিউটের পরিচালক মিরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে এই রোগটি বাংলাদেশে সনাক্ত হলেও, এবছরই সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলছেন, ‘ঢাকায় মোবাইল নাম্বারের ভিত্তিতে র‌্যানডমলি আমরা ৪ হাজার মানুষের মধ্যে একটি জরিপ করেছি।’
‘এখনো সেই জরিপের ফলাফল চূড়ান্ত হয়নি, সেটির পর্যালোচনা চলছে, তবে প্রাথমিক একটি ধারণা দিতে পারি। এই চার হাজার লোকের মধ্যে ৩৫৭জন চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ থেকে হয়তো ধারণা করতে পারেন যে, ঢাকায় কত শতাংশ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন।
এই রোগে প্রচণ্ড জ্বর থেকে ওঠার পরেও শরীরে ব্যথা থেকে যায় দীর্ঘদিন। সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা ভোগান্তির কারণ হয়েছে চিকুনগুনিয়া? চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন, বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনকার আয়ের উপর নির্ভর করতে হয়।
ঢাকার গ্রিনরোডের একজন মুদি দোকানদার মো. মকবুল বলছেন, ‘আমি চিকুনগুনিয়া রোগে ১৫দিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম। দোকান চালাতে পারি নাই, আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণ করে এতদিন চলেছি, প্রায় ১৫ হাজার টাকা দেনা হয়ে গেছে।’
একটি দোকানের বিক্রয় কর্মী ফাইজুল বলছেন, ‘একবার জ্বর হয়ে যাওয়ার পর এখন আবার শরীর খারাপ হয়েছে। অনেকদিন কাজে কামাই করেছি, গত দুইদিন ধরেও কাজে যেতে পারছি না। একদিন যেতে না পারলে বেতন কেটে রাখে।’
এই রোগের শিকার হওয়ার পর অনেকদিন নিজের কাজে যেতে পারেননি ঢাকার গ্রীনরোডের মাজেদা বেগম। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার স্বামীও। মাজেদা বেগম বলছেন, ‘আমি বাসায় কাজ করি। জ্বর হওয়ার পর দশ বারোদিন কাজে যেতে পারি নাই। একটু ভালো হয়ে তিন-চারদিন গেছি। এরপর আবার যেতে পারিনাই। এজন্য আমার দুইটা কাজ চলে গেছে।’
তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। একদিন সকালে হঠাৎ করেই এনজিওকর্মী রুথ লিপিকা হিরা বুঝতে পারেন, তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। পনেরো দিন অসুস্থ থাকার পর, এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।
তিনি বলছেন, ‘একদিন সকালে উঠে বুঝতে পারি, আমার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে, শরীরে ব্যথা। এরপর ১৫দিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে। পরে মুখে র্যা শ উঠেছে। এখনো শরীরে অনেক ব্যথা, হাটুতে ব্যথা হয়।’
রুথ লিপিকা হিরা বলছেন, ‘যেদিন অসুস্থ হলাম, সেদিন অফিসে জরুরি মিটিং ছিল। কিন্তু ছুটি নিতে হয়েছে। আর এখন কাজে ফিরে এতদিনের সব কাজ একসাথে করতে হচ্ছে।’
তবে শুধু যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারাই নয়, পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঝড় যাচ্ছে পরিবার প্রধানদের উপর দিয়েও। এরকম একজন মো.আলম, যার স্ত্রী ও দুই মেয়েই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
মো.আলম বলছেন, ‘বাড়ির লোকজন সবাই অসুস্থ। আমি তাদের দেখবো নাকি কাজে যাবো, তাই বুঝছি না।’
ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, ডা. নাজিয়া হক বলছেন, গত কয়েকমাসে অন্য জ্বরের রোগীর তুলনায় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীই তাদের কাছে বেশি আসছে।
ডা. নাজিয়া হক বলছেন, ‘জ্বর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত কিছুদিন ধরে আমাদের এখানে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীই বেশি আসছেন। এদের মধ্যে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত সবাই রয়েছেন।’
ডেঙ্গু রোগের বাহন এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া রোগেরও কারণ। এখনো এই রোগের পুরোপুরি প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকদের ধারণা, বৃষ্টি যতদিন থাকবে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ থাকতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ততদিন মশা থেকে সতর্কতাই, যেমন মশারি বা ওষুধ ব্যবহার করাই হবে এ থেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায়। বৃষ্টির পর যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, যেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে, সেদিকেও নজর দিতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি কামনা করে রাজধানীর মসজিদে-মসজিদে জুমার নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা। এ জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবার্তা অনুসরণ করার আহ্বান জানান মোনাজাত পরিচালনাকারী খতিব ও ঈমামরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মিনার মসজিদের ইমাম মাওলানা আসাদ বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। চিকুনগুনিয়াসহ সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে স্বাস্থ্যবার্তা অনুসরণ করে চলতে হবে। সুস্থতা আল্লাহর বড় নিয়ামত।’
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের লিখিত অনুরোধে শুক্রবার এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধের জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মসজিদের খুতবায় সচেতনতামূলকবার্তা পড়ে শোনান খতিবরা। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি কামনা করেন তারা।
খতিবরা বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। নিজ আঙিনা পরিষ্কার রাখলে আর মশা জন্মাতে পারবে না।’
সতর্কতামূলক বার্তায় বলা হয়, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মশা যেন কামড়াতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনে বা রাতে যেকোনও সময় ঘুমাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদাভাবে মশারির ভেতর রাখতে হবে। শরীরের অনাবৃত অংশে মশা প্রতিরোধক লোশন ব্যবহার ও জানালায় নেট লাগানো ছাড়াও প্রয়োজনে দরজা-জানালা বন্ধ রাখার জন্যও বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়েছে, মশার বংশবিস্তারের স্থানগুলো ধ্বংস করতে হবে। বাসা-বাড়ির আশপাশে মাটির পাত্র, কলসি, খোসা, বালতি, ড্রামসহ যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এসির পানি যেন জমে না থাকে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। কোথাও যেন পানি জমতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

About Dhakar News

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x

Check Also

শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন : শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিনে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ...

বিএনপির গণসমাবেশ:রাতভর পুলিশি অভিযানে আটক ২০

বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। রাতভর ...

কোনো ছাড় নয়, ডিসেম্বরের চেয়ে কড়া খেলা হবে : ওবায়দুল কাদের

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো ছাড় হবে না। ডিসেম্বরের চেয়ে ...

নাইকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ১৯ অক্টোবর

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৯ ...

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রপতি

উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বাসস জানায়, সোমবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ...