তিরিশ বছরের উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ক্রিকেটের সঙ্গে কস্মিনকালেও তার কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু ক্যাপ্টেন ভিরাট কোহলির ‘মেজাজকে ঠান্ডা করতে’ তিনি ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন!
ভারতীয় বোর্ডকে পাঠানো নিজের সিভি-তে ব্রহ্মচারী লিখেছেন, “কোনও ক্রিকেট কিংবদন্তী ভিরাট কোহলির উদ্ধত মেজাজের সঙ্গে সামলাতে পারবেন না – ফলে আমার মতো আনকোরা, অপরিচিত একজনই হবেন কোচ হিসেবে উপযুক্ত!”
তবে ভারতের প্রধান কোচ হওয়ার দৌড়ে ব্রহ্মচারীকে লড়তে হচ্ছে রবি শাস্ত্রী, বীরেন্দর সেহাওয়াগ, টম মুডি-র মতো অনেক বাঘা বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে।
ভারতীয় দলের প্রধান কোচ নির্বাচনের জন্য সোমবার ইন্টারভিউ বোর্ড বসছে। দেশের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির তিন সদস্য – সাচিন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি ও ভিভিএস লক্ষ্মণ আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নেবেন।
কমিটি ব্রহ্মচারীকে আদৌ ইন্টারভিউয়ের জন্য শর্টলিস্ট করবেন কি না সেটা অবশ্য জানা নেই, তবে ধারণা করা হচ্ছে সেই সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
ভারতের ক্রিকেট পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রবি শাস্ত্রীই দলের কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তিনি আগে ভারতের ক্রিকেট ডিরেক্টর পদে সাফল্যের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন।
সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের পরই ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেন অনিল কুম্বলে। অধিনায়ক কোহলির সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না মোটেই।
ভারতের এই সাবেক তারকা স্পিনারের সঙ্গে ক্যাপ্টেন ভিরাট কোহলির মনোমালিন্য প্রকাশ্যেও চলে এসেছিল।
কুম্বলের কড়া ধাঁচের কাজের ধারার সঙ্গে ড্রেসিং রুম যে মানিয়ে নিতে পারছে না সেটা কোহলি ঠারেঠোরে বহুবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।তুলনায় রবি শাস্ত্রী ভারতের ড্রেসিং রুমে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। অনুশীলনের পাশাপাশি তিনি যেভাবে ক্রিকেটারদের দেদার পার্টি করতেও উৎসাহ দিতেন, সেটা তাকে অনেক ক্রিকেটারের কাছেই গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।
ভারতের আর এক ক্রিকেট লেজেন্ড সেহাওয়াগও আবেদনকারীদের মধ্যে আছেন। তবে দারুণ মারকুটে ব্যাটসম্যান ও বিরাট প্রতিভাবান ক্রিকেটার বলে পরিচিত হলেও কোচ হিসেবে তিনি তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি।
বিদেশি আবেদনকারীদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার টম মুডি-ও বড় নাম। ২০১১তে তিনি শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলেন, তার কোচিংয়ে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদও আইপিএল খেতাব জিতেছে।
আবেদনকারীদের মধ্যে ভারতের সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লালচাঁদ রাজপুতও আছেন। তার কোচিংয়ে দশ বছর আগে ভারত প্রথম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল।
এছাড়াও রিচার্ড পাইবাস, ফিল সিমন্স, ডোড্ডা গণেশ, রাকেশ শর্মা (ওমান জাতীয় দলেন কোচ), ল্যান্স ক্লুসনারের মতো সাবেক ক্রিকেটার বা কোচরাও এই চাকরির জন্য সিভি জমা দিয়েছেন।
কিন্তু মোট দশটা যে আবেদন জমা পড়েছে তার মধ্যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী-র সিভি-ই সবচেয়ে চমকপ্রদ।
তার যুক্তি খুব সহজ, “ভারতীয় বোর্ড যদি কোনও সাবেক ক্রিকেটারকে কোচ হিসেবে নিযুক্ত করে তাহলে ভিরাট কোহলি তাকেও অপমান করবেন এবং তার পরিণতিও অনিল কুম্বলের মতোই হবে।”
“কিন্তু আমি কোহলির ওই দুর্বিনীত মেজাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব – যেটা কোনও ক্রিকেট লেজেন্ডের পক্ষে সম্ভব নয়। এভাবেই আমি ক্যাপ্টেনকে সঠিক রাস্তায় টেনে নিয়ে আসতে পারব”, দাবি করেছেন ব্রহ্মচারী!
