ত্রাণবাহী নৌকা দেখলেই বানবাসী মানুষের ভিড় লেগে যায় হাকালুকি হাওরে। এ চিত্র প্রতিদিনকার। মেম্বার চেয়ারম্যানদের লিষ্ট মোতাবেক ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বানভাসী মানুষের রোষানলে পড়েন ত্রাণ বিতরণকারী সরকারী বেসরকারি কর্তৃপক্ষ। যদিও এ পর্যন্ত ৩৪০ টন চাল, নগদ ১৭ লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে কুলাউড়ার বন্যা কবলিত ৬ ইউনিয়নে। ২৪ হাজার জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি পেয়েছেন সরকারি এ ত্রাণ সহায়তা। কিন্তু বানভাসী মানুষের অভাস প্রকট। কারণ মার্চের ২৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ১ম দফা অকাল বন্যায় হাকালুকির সমস্ত বোরো ধান পানিতে পচে নষ্ট হওয়ার পর জুন থেকে শুরু হওয়া ২য় দফা বন্যায় মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে গত ৩ দিন থেকে পানি কিছুটা কমলেও হাকালুকির মানুষের দুর্ভোগ মোটেই কমেনি বরং দূর্ভোগের সাথে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট, ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমেনিয়াসহ পানিবাহিত রোগবালাই।
সরেজমিনে শুক্রবার বিকেল ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলা অংশের শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত ভুকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা, জাবদা, চিলারকান্দি, বড়দল, কানেহাত ও ভুকশিমইল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মানুষের বাড়িতে এখনো হাঁটু পানি। রাস্তাঘাট পানির নিচে। ঘর থেকে বোরোনোর কোনো সুযোগ নেই। যাদের নৌকা রয়েছে তারা যাতায়াত করতে পারছেন। আর যাদের নৌকা নেই তারা বাড়ি থেকে ত্রাণ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন যে যেভাবে পারছেন সেভাবে। কথা হয় বড়দল গ্রামের গৌরাঙ্গ, জামাল ও রিয়াজসহ কয়েকজনের সাথে। তাদের বক্তব্য সরকার থেকে সাহায্য পাচ্ছেন । কিন্তু তা একেবারেই নগন্য। কেউ পেয়েছেন ঈদের আগে একবার ১০ কেজি চাল। আবার কেউ পেয়েছেন ঈদের পরে ১৩ কেজি করে গম। আবার কেউ কেউ আবার পেয়েছেন ৫ শ’ টাকা করে। অনেকে আরও বেশিও পেয়েছেন। কিন্তু বোরো ধান হারানো এবং বর্তমানে বন্যার জন্য আয় রোজগার বন্ধ মানুষের এ ত্রাণ পেয়ে অভাব লাঘব হচ্ছে না। বড়দল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো: গোলাম রাব্বি নৌকা যোগে দূর্গত মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে শুকনো খাবার ও চাল বিতরন করছেন। সঙ্গে ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: জাকির হোসেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবুল কাশেম রয়েছেন। তারা দুর্গত মানুষের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছেন।
এসময় ইউএনও চৌধুরী গোলাম রাব্বি সাংবাদিকদেরকে জানান, দুর্গত মানুষের চাহিদা অসীম। কুলাউড়া উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৪ হাজার মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে সরকারিভাবে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যাংক, প্রবাসী ও ব্যক্তি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি হিসাবে ২১ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
