আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যেসব নেতার ইমেজ ড্যামেজ হয়ে গেছে, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।
তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি জরিপ করাচ্ছেন। এর মাধ্যমে গ্রহণযোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এই মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা করে যেন ঘরের মধ্যে ঘর তৈরি না হয়, হানাহানি, রক্তারক্তি না হয়। যারা এ কাজ করবেন, তাদের মনোনয়ন হবে না।
সোমবার দুপুরে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা ছাত্রলীগের ১৭তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা রয়েছে। ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো নেতার স্বার্থরক্ষার পাহারাদার হতে পারে না। তোমরা কোনো বিভক্তির মধ্যে যাবে না। ছাত্রলীগ এখন থেকে কাজ করবে নৌকার পক্ষে। ছাত্রলীগের প্রার্থী হবে নৌকা। কোনো বিশেষ প্রার্থীর লোক হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে টার্গেট ফার্স্ট টাইম ভোটার ও তরুণ ভোটার। এরপর ফোকাস থাকবে নারী ভোটার। ঐক্যবদ্ধ থেকে ছাত্রলীগকে এদের কাছে যেতে হবে।
ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, অনিয়মতি-অছাত্র ও মাদকাসক্তরা যেন ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান না পায়। পরে যেন না শুনি তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটি বিলম্বিত হলে অযোগ্যরা স্থান পেয়ে যায়। এজন্য যশোরের কমিটি যশোর থেকেই ঘোষণা করতে হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকিকে ‘আষাঢ়ের তর্জন গর্জন’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি দল আছে তারা ৮ বছরে ৮ দিনও রাজপথে নামতে পারেনি। তারা বলে ঈদের পর মাঠে নামবে। গত ৮ বছরে ১৭টা ঈদ চলে গেছে, কিন্তু মরা গাঙ্গে কি জোয়ার আসে? এই ঈদের পরও ১৪ দিন চলে গেছে। তারা বলে এই দিন না ওই দিন; এই বছর না ওই বছর; এই ঈদ না ওই ঈদের পর আন্দোলন হবে। কিন্তু ‘আষাঢ়ের তর্জন গর্জনই সার’।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। সেই ভুলে তারা হতাশ। মির্জা ফখরুল সাহেব এখন শুধু কাঁদেন। আমি বলি আপনারা তো ভাল আছেন। আপনার ওপর চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে। আহত হননি। আমাদের সেদিন রাজপথে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। বরিশাল খুলনা, সাতৰীরা ও ঈশ্বরদীতে যেতে বাঁধা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির আমলে বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়েছিল। সেদিন ছিল আমাদের কান্না। আর আজ আপনারা মায়াকান্না করছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সদস্য এসএম কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, স্থানীয় সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, কাজী নাবিল আহমেদ, রণজিৎ কুমার রায়, স্বপন ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল প্রমুখ। সম্মেলনে উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। সভা পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল।
জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সেই বিতর্কিতরাই : যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে রওশন ইকবাল শাহী সভাপতি ও ছালছাবিল ইসলাম জিসান সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোট গ্রহণ শেষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ফলাফল ঘোষণা করেন। শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
নবনির্বাচিত দু’নেতাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী নাইমূল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার আসামি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র রিয়াদ।
