তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে যে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালানো হয় আসছে ১৫ জুলাই তার এক বছর পূর্তি হবে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলেও এঘটনা দেশটির সমাজ ও রাজনীতিতে এক সুদূরপ্রসারী ছাপ রেখে গেছে।
এই ঘটনা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম একটি বড় বেদনাদায়ক ঘটনা। অনেকে মনে করেছিল এই ঘটনার পর দেশটির ক্ষমতাসীনরা দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরিবর্তে এরদোগান তার ক্ষমতাকে অনেক বেশি পাকাপোক্ত করতে পেরেছেন।
তবে, কূটনৈতিক মঞ্চে তুরস্ককে কিছু বিচ্ছিন্নতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই ঘটনার পর কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র বিশেষকরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এখন তার উপসাগরীয় মিত্র কাতার সঙ্কট থেকে ক্ষতি সীমিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল ফান্ডের আঙ্কারা অফিস পরিচালক ড. ওজগার উনলুহিসারসিকলি বলেন, ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার এক বছর পর প্রেসিডেন্ট এরদোগান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক শক্তিশালী।’তিনি আরো বলেন, এটি অনিবার্যভাবে তুরস্কের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে, বিশেষত ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
১৫ জুলাইয়ের শহিদেরা
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ এরদোগানের দেড় দশকের ক্ষমতাকে কেড়ে নিতে অভ্যুত্থান চেষ্টা চালায়। এজন্য তারা ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন কয়েকটি সেতু বন্ধ করে দেয়, আঙ্কারায় পার্লামেন্টে বোমা হামলা চালায় এবং শহরের রাস্তায় ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে হলিডে থেকে বিজয়ীর বেশে ইস্তাম্বুলে ফিরেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং হাজার হাজার সাধারণ তুর্কি জনগণ রাস্তায় নেমে ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে। তাদের মোকাবেলা করতে গিয়ে ২৪৯ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। দেশটির কর্তৃপক্ষ এ্ই প্রতিরোধকে গণতন্ত্রের জন্য একটি বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ইস্তাম্বুলের বসফরাস সেতুর নাম পরিবর্তন করে এর নামকরন করা হয় ‘১৫ জুলাইয়ের শহিদ সেতু’। প্রসঙ্গত, ইস্তাম্বুলের এই সেতুটি ছিল সেনাদের সঙ্গে জনগণের লড়াইয়ের মূল কেন্দ্র।
নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৫ জুলাইকে দেশটির বার্ষিক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দিনটি ‘গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের’ প্রতীক হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
‘কঠোর নিয়ন্ত্রণ’
অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রীয় টিভি প্রেজেন্টারদের অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের বিবৃতি প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে, এরদোগান ‘ফেসবুক অ্যাপস ব্যবহার করে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার জন্য আহ্বান জানান।সরাসরি প্রচার করা ওই আহ্বানে এরদোগান তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন হচ্ছেন তার এক সময়কার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রচারক ফেতুল্লাহ গুলেন।
তবে এরদোগানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন গুলেন। এরদোগান তুর্কি প্রতিষ্ঠান থেকে গুলেনের ‘ভাইরাস’ চিরতরে নির্মূলের অঙ্গীকার করেছেন।
পরবর্তীকালে দেশটিতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়; যা আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আরো লক্ষাধিক লোককে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।সমালোচকরা বলছেন গত বছরের ২০ জুলাই আরোপিত জরুরি অবস্থা যা এখনো বহাল রয়ে গেছে এবং এর মাধ্যমে এরদোগানের সব বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাদের মধ্য রয়েছে সাংবাদিক, রাজনীতিক কর্মী ও কুর্দিরা।
১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর ইস্তাম্বুলে অবতরন করে এরদোগান এই প্রচেষ্টাকে ‘আল্লাহর আশীর্বাদ’ হিসাবে বর্ণনা করেন এবং অন্যদিকে সমালোচকরা তাকে ওই ঘটনার সুবিধাভুগি হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
গত ১৬ এপ্রিল এরদোগান গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এটি তাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অধিকার দিয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্ব পুনরায় গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে।
সূত্র: এএফপি