Home 20 দেশের খবর 20 চিকুনগুনিয়ার আগ্রাসন থামাইবে কে?

চিকুনগুনিয়ার আগ্রাসন থামাইবে কে?

চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে ছড়াইয়া পড়িয়াছে তাহা কোনো নূতন খবর নহে। এডিস মশাবাহিত এই রোগটি যে ইতোমধ্যে রাজধানীর সীমানা অতিক্রম করিয়া দেশের আনাচে-কানাচে হানা দিতে শুরু করিয়াছে— সেই খবরও বাসি হইয়া গিয়াছে। গতকালের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নেত্রকোনার কলমাকান্দায়ও এখন চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ পরিলক্ষিত হইতেছে। কমপক্ষে গত তিনমাস যাবত্ নানাভাবে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করিবার সকল চেষ্টাই দৃশ্যত ব্যর্থ হইবার পর বিষয়টি এখন আদালত পর্যন্ত গড়াইয়াছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর এ-সংক্রান্ত একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করিয়াছেন। জারিকৃত রুলে কেন স্প্রে ও যথাযথ ঔষধ ছিটানোর মাধ্যমে মশা ধ্বংস করা হইবে না, আক্রান্ত এলাকার ডাম্পিং স্পটগুলি কেন পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হইবে না এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে না—তাহা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাইবার জন্য স্বাস্থ্যসচিব, এলজিআরডি সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। চিকুনগুনিয়া ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মুখে নাগরিকদের অসহায়তার মাত্রা অনুধাবনের জন্য হাইকোর্টের এই রুলটিই যথেষ্ট বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে।

 

চরম হতাশার বিষয় হইল, আমাদের অত্যন্ত সফলভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রহিয়াছে। সকলেই জানেন, প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর বাহকও এই এডিস মশা। সেই এডিস মশাকে তখন যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারি, এইবার পারিলাম না কেন? চিকুনগুনিয়ার সূত্রপাত যেখানে সেই রাজধানীবাসী ক্রমাগত অভিযোগ করিয়া আসিতেছেন যে মশার উত্পাতে তাহাদের পক্ষে দিনেও কাজকর্ম করা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। অথচ বার বার আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও মশক নিধনের কোনো উদ্যোগ নাই। নাগরিকদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন যে নহে তাহার দৃষ্টান্ত রাজধানী জুড়িয়াই দৃশ্যমান। চিকুনগুনিয়া প্রায় মহামারী আকার ধারণ করা সত্ত্বেও মশক নিধনের দায়িত্ব যাহাদের সেই সিটি করপোরেশন প্রচার-প্রচারণাতেই যতটা সরব, আসল কাজে ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ। দেশ যদি মশাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় তাহা হইলে শত প্রচারণায়ও যে কোনো ফল হইবে না তাহা অনুধাবন করিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপেই দেখা গিয়াছে যে রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতি ১১ জনের একজন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত। তাহাদের মতে, গত এক দশকে চিকুনগুনিয়ার এমন প্রকোপ আর দেখা যায় নাই।

 

পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছিয়াছে তাহাতে রাজধানীসহ আক্রান্ত এলাকাগুলিতে অনতিবিলম্বে সর্বাত্মক মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করিতে হইবে। ইহার জন্য যে ঔষধ ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন নিশ্চিত করিতে হইবে তাহার সরবরাহ। সাধারণত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিই এই দায়িত্ব পালন করিয়া থাকে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাহাদের একার পক্ষে তাহা সম্ভব না হইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর বা দফতরসমূহের সহায়তা গ্রহণ করা যাইতে পারে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হইয়া গিয়াছে। এই ক্ষেত্রে আর কালক্ষেপণের কিংবা দায়িত্ব এড়াইয়া যাইবার কোনো সুযোগ নাই। আমাদের বিশ্বাস, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলও এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। 

About Dhakar News

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x

Check Also

ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা: মৎসজীবীদের উদ্বেগ

মো: ফিরোজ ফরাজী, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী): ইলিশ আহরণে সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মাথায় হাত পড়েছে রাঙ্গাবালীর ...

রাজধানীতে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ: দগ্ধ ৫

রাজধানী ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী নামাপাড়া রোডে ওয়াসার কাজ করার সময় তিতাস গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণে ৫ ...

দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই: ড.আনোয়ার খান এমপি

মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর): দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই ...

নাব্যতা সংকটে দারছিড়া: ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

মোঃ ফিরোজ ফরাজী রাঙ্গাবালি (পটুয়াখালী):পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা। একপাশে বঙ্গপসাগর তিন দিকে নদী। রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া ...

মেঘনায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় শিশুসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৩

মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জের সীমান্ত চরকিশোরগঞ্জে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় এক শিশুসহ দুইজনের লাশ উদ্ধার করা ...