৩৮তম বিসিএস থেকে এর পরীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন আসছে। এবার থেকে যে কেউ চাইলে ইংরেজিতেও এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এর জন্য আবেদনেই তা উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির ২০০ নম্বরের জন্য আলাদা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে প্রার্থীদের। এতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৩৮তম বিসিএসের আবেদন। আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনের সময় প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে। যাদের বা যার এনআইডি নেই তিনি বা তারা ৩৮ বিসিএসে আবেদনেরই সুযোগ পাবেন না। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দু’জন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। তাদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হবে বলে মনে করছে সরকারি কর্ম কমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদেক।
উল্লেখ্য, ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে জনপ্রশাসনের জন্য দুই হাজার ২৪ জন প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ৩০০, পুলিশ ক্যাডারের ১০০টি পদসহ ৩৮তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৫২০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি এবং শিা ক্যাডারে ৯৫৫টি পদের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। পিএসসি সূত্রে বলা হয়েছে, ১০ আগস্টের পর থেকে আবেদনপত্র কেন্দ্রীয়ভাবে বাছাইয়ের পর আগামী অক্টোবরে ৩৮ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীা হতে পারে। সাত বিভাগের পাশাপাশি এবার নতুন বিভাগ ময়মনসিংহেও পরীা নেয়া হবে।
পিএসসি সূত্রে আরো বলা হয়েছে, ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার অনলাইন আবেদনসংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে হেল্প লাইন খুলবে পিএসসি। এ হেল্প লাইনের নাম্বার পিএসসির ওয়েসাইটে দেয়া হবে। পিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রার্থীদের সমস্যার সমাধান দেবেন। টেলিটকের পাঁচটি নম্বরে প্রার্থীরা যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আবেদনের দিন থেকে পুরো প্রক্রিয়া চলাকালে পর্যন্ত এই হেল্প লাইন চালু থাকবে।
পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিসিএস পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে বর্তমান সরকারের আগের আমল থেকে নানা অভিযোগ এবং পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখেই পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়নের নতুন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে পিএসসি। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য ব্যাপক আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনার পর নতুন এ পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা ও সম্মতি অনুযায়ী ৩৮তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের দাবি ছিল, বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ পরীক্ষায় যেখানে এক-দুই নম্বরেই ভাগ্য বদলে যেতে পারে একজন প্রার্থীর। সেখানে পরীক্ষকের গাফিলতি বা উদাসীনতায় অনেক সময়েই পরীক্ষার্থী কাক্সিক্ষত ও প্রাপ্য নম্বর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৬ সালের পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে গেলে রাষ্ট্রপতিও দু’জনকে দিয়ে খাতার যথাযথ মূল্যায়নের নির্দেশনা দেন পিএসসি সদস্যদের। এর পরই পরীক্ষা পদ্ধতিতে নতুন পরিবর্তন এবং মূল্যায়নের ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে পিএসসি। ৩৮তম বিসিএস থেকে তা কার্যকর করতে যাচ্ছে পিএসসি।
পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক পরীক্ষা পদ্ধতি ও খাতা মূল্যায়ন সম্পর্কে বলেন, আগামী বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয় প্রশ্ন রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে চাকরি প্রার্থীদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ব্যাপক ধারণা তৈরিতে সহায়ক হবে। ৩৮তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দু’জন পরীক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি জানান, প্রার্থীরা বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা নিজ ভাষায় দিয়ে বাকি বিষয়গুলোর প্রশ্ন সুবিধামতো ভাষায় উত্তর করতে পারেন। তবে ইংরেজিতে শুরু করলে ইংরেজি ও বাংলায় শুরু করলে বাংলায় উত্তর শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিষয়টি আবেদনেও উল্লেখ করতে হবে। ৩৮তম বিসিএসে (লিখিত) ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকবে। বাংলা বা ইংরেজি সংস্করণে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদন করার সময়ই অনলাইনে উল্লেখ করে দিতে হবে কোনো সংস্করণে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক। কারণ যে প্রার্থী যে সংস্করণে পরীক্ষা দেবে, তার জন্য কেবল সেই সংস্করণের প্রশ্নই বরাদ্দ রাখা হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে সংস্করণ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না।
