দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও বসবাস উপযোগী নগরী হিসেবে পরিচিত শহর রাজশাহী তিনদিনেই ‘আবর্জনার ভাগাড়’এ পরিণত হয়েছে। নগরজুড়ে আবর্জনার স্তুপ আর দুর্গন্ধ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ২০০ দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারিদের টানা তিনদিনের কর্মবিরতির কারণেই এমন দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ২০০ দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারিদের টানা তিনদিনের কর্মবিরতিতে আবর্জনার স্তুব জমে গেছে শহরে। এতে দুর্ভেগে পড়েছেন নগরবাসী। তৃতীয় দিনের মত তালাবন্ধ নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে কর্মচারিরা। তারা ১১ দফার দাবি কমিয়ে বেতন বৃদ্ধির এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে তারা।
খুলে দেয়া হয়েছে রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানা ও উদ্যান এবং গ্যারেজের গেটের তালা।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে চিড়িয়াখানা ও গ্যারেজের তালা খুলে দেয়া হয়েছে। তবে নগর ভবন তালাবদ্ধ রেখে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলছে বলে জানান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল শেখ।
তিনি বলেন, ১১ দফা দাবি আদায়ে গত রবিবার নগর ভবন, রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানা ও সিটি করপোরেশনের গ্যারেজে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করে তারা। মঙ্গলবার দুপুরে চিড়িয়াখানা ও গ্যারেজের তালা খুলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা ও গ্যারেজ খুলে দেওয়া হলেও দৈনিক মজুরির দুই হাজার ২০০ শ্রমিকের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। তবে স্থায়ী ৭০০ কর্মচারি কাজ কাজ করলেও তাদের ব্যাপারে আপত্তি থাকবে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ১১ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করলেও তা কমিয়ে বেতন বৃদ্ধির এক দফা করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত নগর ভবনের তালা খোলা হবে না বলে জানান তিনি।
দুলাল শেখ আরো বলেন, গত বছরের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক পরিপত্র নিয়মিত দক্ষ শ্রমিকদের ৫০০ টাকা ও অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিকদের ৪৫০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখনো তাদের ৩৩০ টাকা মজুরি দিয়ে থাকে। তাদের মজুরি সরকারের নির্ধারিত হারে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে তারা।
এদিকে, শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে নগরজুড়ে জমে গেছে আবর্জনার স্তুপ। রাসিকের ডাস্টিবিনসহ বিভিন্ন রাস্তায় ও বাড়ির সামনে পড়ে আছে এসব বর্জ্য। নগরীর শিরোইল রেলওয়ে স্টেশনের প্রকৌশলী ভবনের সামনের রাসিকের ডাস্টিবিন, গেটার রোর্ড এলাকার, নগরীল মিয়াপাড়া, ঘোষপাড়া, আলুপট্টি, বড়কুঠি এলাকার আবর্জনা ফেলা স্থানের বাইরে রাস্তায় ফেলা হয়েছে।
নগরীর শিরোইল এলাকায় আসাদ আলী বলেন, ময়লাগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কয়েকদিন থেকে আবর্জনা অপসারণের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সিটি করপোরেশন। এ আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে রাস্তায় আসছে। এর ফলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে।
জেসমিন আক্তার বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মচারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা নিয়ে যায়। কিন্তু গত তিনদিন থেকে তারা ময়লা নিতে আসছে না। ফলে বাড়ির সামনের রাস্তায় ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্না কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আর সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভাব হয়নি।
