পদ্ম-যমুনার অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতে স্পর্শকাতর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ- রুটে ফেরি-লঞ্চ চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য বাস-কোচ আটকে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রীসাধারণ, পরিবহন শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা অঞ্চলের উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ নাসির চৌধুরী জানান, পাটুরিয়া দৌলতদিয়া রুটের ১৭টির মধ্যে নয়টি রো-রো, পাঁচটি ইউটিলিটি ও তিনটি কে-টাইপ ফেরি যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ, পদ্মা-যমুনার অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ¯্রােতের তীব্রতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। স্রোতের বিপরিতে ফেরি চলাচলে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে অনেক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কম হওয়ায় ঘাটে পারাপারেরর অপেক্ষায় থাকা যানবহনের সংখ্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীতে বাতাসে সৃষ্ট ঢেউ ও স্রোতের তীব্রতা কমে এলে ফেরি সার্ভিস স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি আসা প্রকাশ করেন।
এ রুটে চলাচলকারী রো-রো ফেরি গোলাম মাওলা’র ইঞ্জিন অফিসার মোঃ আমজাদ হোসেন জানান, নদীতে প্রবল স্রোত ও ঢেউ এরিয়ে ঘুরপথে জাহাজ পরিচালনায় স্বাভাবিক সময় থেকে বর্তমান অবস্থায় দ্বিগুন সময় ব্যয় হচ্ছে। এছাড়, পানি বৃদ্ধির কারণে উভয় ঘাটের পন্টুনগুলো লো-লেভেল থেকে ওয়াটার লেভেলে উঠা-নামা করায় ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে বিঘ্ন ঘটছে।
ফেরি পারের অপেক্ষায় পাটুরিয়া ঘাটে আটকে থাকা যশোরগামী পণ্যবাহী ট্রাক চালক সাত্তার আলী জানান, গত দু’দিন যাবৎ পারের অপেক্ষায় রয়েছি। রোড খরচ বাবদ মালিকের দেয়া নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা প্রায় শেষের দিকে। জানি না আর কতো সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। বেনাপোলগামী অপর ট্রাক চালক সামসুল আলমের একই দশা। আষাঢ়ের অব্যাহত গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি তাদের দুর্ভোগ আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফেরি সেক্টর কর্তৃপক্ষ আরোও জানায়, সোমবার সারা দিন মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌ- রুটে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এ রুটে ট্রাকের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘাটে অপেক্ষামাণ যানবাহনের মধ্যে দুর্ভোগ লাগবে যাত্রীবাহী বাস-কোচ, মাইক্রো-কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। বৈরী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে, পারের অপেক্ষায় আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক চালকেদের অভিযোগ সিরিয়াল ও বুকিং কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের চাহিদানুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ না দিলে ফেরি পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় সিরিয়াল ভঙ্গকরে পিছনের গাড়ি আগে পার হচ্ছে। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত যানবাহন শ্রমিকরা গতকাল সিরিয়াল কাউন্টারের সামনে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃখলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে।
অপরদিকে, নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে কার্গো-লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মঙ্গলবার এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গদ্মা ও যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে ৮ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার স্তরে প্রবাহিত হচ্ছিল।