চট্টগ্রামের আলোচিত গৃহবধূ মাহমুদা খানম মিতু হত্যার এক বছরেরও বেশি সময় পর এ ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মহানগর ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ অনেকেই করতে পারেন। কিন্তু এটা সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। তবে আমি নির্দোষ।’ তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে বাবুল আক্তার বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে আসতে বলেছিলেন। তিনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট যা যা জানতে চেয়েছেন, আমি তা বলেছি।’ মিতু হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত তদন্তের যা অগ্রগতি হয়েছে বাদী হিসেবে তাতে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে বাবুল আক্তার বলেন, তদন্ত এখনো বাকি আছে। তাই এখনই অসন্তুষ্ট বলা যাবে না।
বাবুল আক্তার ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপি’র গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, মামলার তদন্তের কারণে বাবুল আক্তারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। উনার সাথে মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় ক্রস চেক করা দরকার ছিল। কিছু রুটিন ওয়ার্কও ছিল। এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা হয়েছে।
বাবুল আক্তার সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ ধরনের কোনো দাবি করেননি বলে জানান কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, উনি (বাবুল) আমার কাছে এমন কিছু বলেননি। নিজেকে নির্দোষ বা দোষী তা নিয়ে কিছু বলেননি। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তার সাথে কথা হয়েছে।
বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে কীনা এ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে সার্বিক বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা হয়েছে যা তদন্তের স্বার্থে সুনিদিষ্টভাবে এখন বলা যাবে না। মিতুর পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বাবুলের সাথে কথা হয়েছে কিনা তদন্ত কর্মকর্তা সে বিষয়েও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মামলার বাদী না অভিযুক্ত হিসেবে বাবুল আক্তারের সাথে কথা হয়েছে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিনি আমার মামলার বাদী। বাদী হিসেবেই কথা হয়েছে। তিনি অভিযুক্ত কিনা এটি তদন্তের বিষয়। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তিনি অভিযুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন। আলোচিত এই মামলার চার্জশিটও খুব শিগগির দেওয়া হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
তদন্ত কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় মহানগর ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বাবুল আক্তার। একটি কালো রঙের পাজেরো জিপে করে তিনি ডিবি কার্যালয়ে আসেন। এ সময় তাকে বেশ উত্ফুল্ল দেখাচ্ছিল। চার ঘন্টার বেশি সময় ধরে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে তিনি কথা বলেন। রাত ৮টায় তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে বের হয়ে সরাসরি গিয়ে ডিবি কার্যালয়ের সামনে রাখা জিপে ওঠেন। গাড়িতে ওঠার আগের মুহুর্তে তিনি সাংবাদিকদের সাথে মিনিট দুয়েক কথা বলেন। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাত্ করেন বাবুল আক্তার।
প্রসঙ্গত গত বছরের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।
