চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অজ্ঞাত রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য চারটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। চরম পুষ্টিহীনতা, কোনো রকম টিকা না দেওয়া, ওষুধ সেবন না করা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকাকে দায়ী করছেন তারা। রক্ত, প্রস্রাব, লালা, নাকের পানিসহ বিভিন্ন নমুনার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে অভিমত তাদের। এদিকে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের অনেকের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এমএ ফয়েজ বলেন, ‘চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের বেশিরভাগই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে মারাত্মক পুষ্টিহীনতার বিষয়টি আমরা দেখতে পেয়েছি। এর পাশাপাশি রক্তশূন্যতা, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ও চামড়ায় দানা-গুটি দেখা গেছে। সার্বিক বিষয় দেখে এটাকে এক ধরনের সংক্রমণ বলে মনে হচ্ছে। মূলত পুষ্টিহীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আক্রান্তরা পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে। পাহাড়ে টাইপাস ও হাম জাতীয় রোগ আছে। আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর রোগীদের রক্ত, প্রস্র্রাব, লালা, নাকের পানিসহ আরও বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে। এসব নমুনা পরীক্ষার পর এই রোগের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘পুষ্টিহীন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই ভাইরাস জ্বরেই শিশুরা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই। অসুস্থদের রক্তের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি অজ্ঞাত রোগে মারা যাওয়া শিশু ও বসবাসকারীদের থাকার স্থান, পান করা পানিসহ নানা বিষয়ে সরেজমিন গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নমুনাগুলো পরীক্ষা করে আমাদের প্রতিবেদন দেয়া হবে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। ঢাকার রিপোর্ট এলে বিস্তারিত জানা যাবে।’চিকিৎসাধীন শিশুদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা ভালোর দিকে বলে জানান সিভিল সার্জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু সাজন্তীর বাবা শচী কুমার বলেন, ‘একদিনের ব্যবধানে আমার মেয়ের অবস্থা অনেকটা ভালো। হাসপাতালে ভর্তির সময় সে কিছুই মুখে দিতে পারত না। তবে এখন ভাতসহ নানা খাবার খেতে পারছে।’
অসুস্থ আরেক শিশু অঞ্জনার বাবা কাউছিরাম বলেন, ‘এখানে আসার পর থেকে মেয়ের অবস্থা ভালো দেখছি। স্যালাইনসহ এখানে নানা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সে এখন মুখে খেতে পারছে।’চমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আক্রান্ত শিশুরা যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করে উল্টো হোমিওপ্যাথিক ও স্থানীয়ভাবে বনাজি চিকিৎসা গ্রহণ করে। যা ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়েছে।
প্রফেসর ডা. মো. শামীম হাসান বলেন, ‘পুষ্টিহীনতার কারণে অসুস্থদের অনেকের মুখে ঘা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে অনেকের শরীরে হিমোগ্লোবিন ও রক্তকণিকা কম আছে। অনেকের আবার পটাশিয়ামও কমে গেছে। তাদের ভাতসহ উন্নতমানের খাবার, স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেকটা ভালোর দিকে তারা।’শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, ‘জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত ছিল। হাসপাতালে না গিয়ে তারা উল্টো অন্য চিকিৎসা করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।’চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে অন্য ওয়ার্ড থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকাদের আনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। এদের অনেকের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।’