রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য মশা নিধনে কার্যক্রম জোরদার করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, চিকুনগুনিয়া মহামারি হোক আর যাই হোক, এর জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আজ শুক্রবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে গুলশান নগর ভবনে ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তথা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডিএনসিসির আমন্ত্রণে সংবাদ সম্মেলনে তিনজন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। এদের একজন রোগতত্ত্ববিদ ও দুজন কীটতত্ত্ববিদ।
তারা হলেন, রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, কীটতত্ত্ববিদ ডা. তৈহিদ উদ্দীন ও ডা. মুনজুর এ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মহামারি হচ্ছে একটি রোগের যে অবস্থান থাকে, সেটি তার অবস্থান থেকে নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট একটি স্থানে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে। সে মোতাবেক বর্তমান সময়ে চিকুনগুনিয়াকে মহামারি বলা যায়। এটি আমার ব্যক্তিগত মত। তবে এটিকে মহামারি ঘোষণা করার অথরিটি রয়েছে। তার সাথে সহমত পোষণ করেন কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ।
জবাবে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মহামারি হোক আর যাই হোক, এজন্য ডিএনসিসি দায়ী না। এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়ায়। এডিস মশা সিটি করপোরেশনের ড্রেন কিংবা ময়লার ডাস্টবিনে জন্মায় না। এ মশা জন্মায় বাসাবাড়িতে, পরিষ্কার পানিতে, নির্মাণ সামগ্রীতে, এসি, ফুলের টব, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার ও ডাবের খোসায়। আমরা বাসাবাড়িতে গিয়ে ওষুধ দিতে পারি না।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আগাম পূর্বাভাস পাইনি। তাছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো জাতীয় নির্দেশিকা আজ পর্যন্ত প্রস্তুত করা হয়নি। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তৈরি করে। যে কারণে প্রথমেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
মেয়র বলেন, চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য যেভাবে সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা হচ্ছে, সেটার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া ঢাকার এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে গিয়ে সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে জনগণের সম্পৃক্ততাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ ও সমবেদনা জানান তিনি।
এডিস মশার ফলে ডেঙ্গু জ্বর দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করে ডা. মুনজুর এ চৌধুরী বলেন, ‘এডিস মশা যেহেতু চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক, সেহেতু দুই রোগ এক সাথেও দেখা দিতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এডিস মশা যদি কাউকে কামড় দেয় তাহলে তার চিকুনগুনিয়া হবে। আবার চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত কোনো রোগীকে মশা কামড়ালে তার মধ্যেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। সেটি যদি আবার কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে তারও চিকুনগুনিয়া হবে।’
ডা. তৈহিদ উদ্দীন বলেন, ‘এডিস মশার মাধ্যমে জিকার ভাইরাসও ছড়ায়। সুতরাং সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাকে মশারির ভেতর রাখতে হবে। না হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রনে আসবে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন।
আজ শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ নগর ভবনে আয়োজিত চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধন কাজে নিয়োজিত ৩০৩ জন স্প্রেম্যান, ১৪৮টি ফগার ও ২৭১টি হস্তচালিত মেশিন দিয়ে পরিচালিত মশক নিধন কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন এবং অঞ্চল-৪ এ চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হয়।