ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে উসকানির ঘটনায় জড়িত তিন জেএমবি জঙ্গিদর খোঁজে শনিবার বাংলাদেশ আসছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। শনিবার কলকাতা থেকে প্রকাশিত বর্তমানের এক প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়। তিন বাংলাদেশি জেএমবি জঙ্গিকে চিহ্নিত করা গেছে বলেও খবর দিয়েছে পত্রিকাটি।
বর্তমান লিখেছে, তারাই গোটা ঘটনার কলকাঠি নেড়েছে। ঘটনার আগে ও পরে বাংলাদেশে বসে তারা এই রাজ্যে থাকা জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই এসটিএফের অফিসাররা শেখ হাসিনার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে গোটা প্রক্রিয়াটি করা হচ্ছে অত্যন্ত গোপনে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেসব তথ্যপ্রমাণ এবং ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে-সেগুলো সাথে নিয়েই বাংলাদেশে যাচ্ছেন এসটিএফ।
বাদুড়িয়া ও বসিরহাটে গোলমালের পিছনে যে বহিরাগতরা রয়েছে, তা প্রথমেই আন্দাজ করেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। ঘটনার আগে সীমান্তের ওপার থেকে (বাংলাদেশ) যেভাবে দলে দলে অপরিচিত মুখের ভিড় বাড়ছিল, তা থেকেই তারা ধারণা করেন, এর পিছনে জঙ্গিগোষ্ঠীর মদত রয়েছে। কারা এর পিছনে রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে নবান্ন থেকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় এসটিএফকে।
খোঁজ চালাতে গিয়ে এসটিএফ প্রথমেই দেখেন, সীমান্তের ওপার থেকে (বাংলাদেশ) কী পরিমাণ ফোন কল আসা-যাওয়া করেছে এবং কী কথাবার্তা হয়েছে। সেই তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে তাদের নজরে আসে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু নম্বর থেকে ঘন ঘন ফোন এসেছে কলকাতায়। ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে এই কলের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। সেই ফোন কল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সমস্ত ফোনই করা হয়েছে বসিরহাট ও বাদুড়িয়ায়। কিন্তু কে এই ফোনগুলি করছে বাংলাদেশ থেকে, তা জানার চেষ্টা করেন এসটিএফ সদস্যরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বসিরহাটে জেএমবি’র শাখা যথেষ্ট সক্রিয়। বাংলাদেশে গরু ও সোনা পাচারকারীদের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে থাকা জেএমবি’র শীর্ষ নেতারা এরাজ্যে বিভিন্ন রসদ পাঠাচ্ছে। কয়েকজন চোরাচালানকারীকে জেরা করে জানা গেছে, জেএমবি’র কোন কোন নেতা এখানে যাতায়াত করছে এবং ঘটনার সময় কারা কারা হাজির ছিল। তার ভিত্তিতেই তিনজনের নাম জানা যায়। তারা ঘটনার তিন-চারদিন আগে এই রাজ্যে আসে।
বর্তমান আরো লিখেছে, জেএমবি’র কর্মীদের মাধ্যমে স্থানীয়দের জোগাড় করা হয়। সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে ওই তিন নেতা। সেখানে জেহাদী কায়দায় ভাষণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিভিন্ন ছবি তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশ কর্মকর্তারা জেনেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উসকানিমূলক যে সমস্ত ছবি পোস্ট করা হয়েছে, তা ছড়িয়েছে ওই তিন নেতাই। এমনকী প্ররোচনামূলক ভিডিও ফুটেজ তৈরি করেছে তারাই। জেএমবি’র তিন শীর্ষ নেতা যেদিন বসিরহাটে এসে বৈঠক করে, সেদিন বিভিন্ন উসকানিমূলক ছবি তারা দেখায় বলে জানা যাচ্ছে। কীভাবে পুলিশকে আক্রমণ করে এলাকায় অশান্তি তৈরি করতে হবে, তার পুরো পরিকল্পনা তৈরি হয়। সেইমতো অপারেশন চালানো হয়।
জেএমবি’র এই জঙ্গিরা বাংলাদেশেও একাধিক ঘটনায় জড়িত বলে জানা যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে পর্যন্ত তারা এখানে লুকিয়ে ছিল। এসটিএফের কাছে খবর আছে, তারা এখন সীমান্ত পেরতে সক্ষম হয়েছে। তবে উত্তর ২৪ পরগনা নয়, অন্য কোনও সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই কারণেই তাদের খুঁজতে বাংলাদেশে যাচ্ছে পুলিশের টিম।
বর্তমান আরো জানিয়েছে আজ (শনিবার) এসটিএফ অফিসাররা বাংলাদেশে রওনা হচ্ছেন। সেখানে গিয়ে তারা কথা বলবেন বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের খোঁজে যৌথ তল্লাশি হতে পারে। একইসঙ্গে খাগড়াগড়কাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধৃত হাতকাটা নাসিরুল্লাকেও জেরা করা হবে। তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা হবে নব্য জেএমবি’র কেউ এই কাজে জড়িত কি না।
কলকাতার বর্তমান অবলম্বনে