উত্তর কোরিয়ার কূটনীতির প্রসঙ্গটি সামনে এলেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বেশ কিছু পছন্দের সম্মুখীন হন। কিন্তু এসব পছন্দের কোনটাই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি।
এ ব্যাপারে জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এশিয়া বিষয়ক সংস্থার প্রাক্তন পরিচালক ভিক্টর চা বলেন, ‘আপনি ভাল এবং খারাপের মধ্যে বাছাই করছেন না। আপনি খারাপ ও অতি খারাপের মধ্য থেকে বাছাই করতে গিয়ে সবচেয়ে খারাপ বিকল্পটি বেছে নিচ্ছেন।’
১৯৯০ এর দশক থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টসিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি আপসমূলক থেকে খোলাখুলি অবন্ধুসূলভ। কিন্তু সত্যিকারের কার্যকর কূটনৈতিকতা এখনো অধরাই রয়েছে এবং মূলত শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যাপকভাবে একটি আগ্রাসী সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়।
তবে, এতে পদ্ধতিগতভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ২০০০ সালে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইটকে এক রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়া পাঠানোসহ বেশ কিছু দৃশ্যমান প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, জর্জ ডব্লিউ বুশ আলোচনার জন্য আরো বেশি ইচ্ছুক ছিলেন; যেটিকে রাডের সিনিয়র আন্তর্জাতিক/প্রতিরক্ষা গবেষক ব্রুস বেনেট ‘হাতবদল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বুশেল আলোচনার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়া কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং পরমাণু পরীক্ষা অব্যাহত রাখে। ওবামা শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক প্রতিশোধের হুমকি জোরদারের মাধ্যমে কৌশলগত ধৈর্য নীতি গ্রহণ করেন।জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রোলিফেরাশন স্টাডিজের পারমাণবিক কৌশল বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস বলছেন, ‘প্রশাসনগুলোর মধ্যে বাগাড়ম্বরতার পার্থক্য হচ্ছে জোর দেয়ার ওপর।’লুইস বলেন, ‘কিন্তু ওই জনপ্রিয় আখ্যানটি একটু বিভ্রান্তিকর। আসলে, নীতিগুলো সত্যিই একই রকম। সেখানে কিছু পার্থক্য আছে, কিন্তু তা আরো অনেক বেশি ধারাবাহিক এবং ক্রিয়াহীন।’উত্তর কোরিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, উত্তর কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিমের শাসনকাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা বারবার একই ধরনের ভুল করছেন।
২০০৩ সালে উত্তর কোরিয়া নিয়ে ছয় পক্ষের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ভিক্টর চা ইঙ্গিত দেন যে, উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, আলোচনার ঐতিহ্যগত উপায়সমূহ এবং নিয়ন্ত্রণ সেখানে কার্যকর ছিল না। প্রথমত, এ ধরনের কৌশল নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির রাশ টেনে ধরতে সেই বুশ যুগে থেকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। ওবামা প্রশাসনের অধীনে এই পদক্ষেপ আরো জোরদার করা হয়েছিল। কিন্তু পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা খুব কমই অর্থবহ প্রভাব ফেলেছে। এই নিষেধাজ্ঞার মুখেই ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে চার চারটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।দ্বিতীয়ত, উত্তর কোরিয়ার আচরণের কারণে আলোচনার প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়া ধারাবাহিকভাবে প্রতিরক্ষা চুক্তি ভঙ্গ করে আসছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।১৯৯৪ সালের পুরোটা বছরজুড়ে ‘সম্মত ফ্রেমওয়ার্কের’ আওতায় যুক্তরাষ্ট্র একটি ধারাবাহিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। এর অধীনে উত্তর কোরিয়া তা পারমাণবিক শক্তির বিস্তার বন্ধ রাখতে সম্মত হয়। এক বক্তৃতায় ক্লিনটন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে এই চুক্তির প্রশংসা করেন।তবে মাত্র কয়েক বছর পরেই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে উত্তর কোরিয়া তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রমাগতভাবে চুক্তির শর্তগুলি লঙ্ঘন করেছে এবং এই লঙ্ঘনের ফলে এর কাঠামো ভেঙে যায়।একইভাবে, ২০১২ সালে ওবামা-ব্রোকারড চুক্তি হয়; যা ‘লিপ ডে এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। কিন্তু সেটিও মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পিয়ংইয়াং থেকে একটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভঙ্গ করা হয়।
দ্য টাইমস অবলম্বনে