পাকিস্তানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘সৃষ্টিকর্তার বিশেষ পছন্দের মানুষ’ হিসেবে মনে করেন অনেকেই।
তাদেরকে ‘খোয়াজা সিরা বা হিজড়া’ বলেও ডাকা হয়। কিন্তু নানা ধরনের বৈষম্যের মধ্য দিয়েই জীবন কাটাতে হয় তাদের।
পারিবারিক সমর্থন, চাকরি, সহ মৌলিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। কিন্তু এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন সেখানকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা।
পাকিস্তানের অন্যতম একজন মডেল কামি, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের সুপার মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বীকৃতি পেয়েছেন কামি।
তাঁর মতে “এটা করাচি শহর। এখানে সামাজিক রীতি নীতি প্রচলিত প্রথা মাফিক চলে। অনেকের মধ্যে জেন্ডার ফ্লুয়েডিটি নতুন নয়”।
নারী নাকি পুরুষ -সে অবস্থান যারা নির্ণয় করতে পারেন না, শতাব্দী ধরে প্রচলিত রীতি অনুসারে পাকিস্তানের সমাজ তাদের নাম দেয়ছে ‘হিজড়া’ বা ‘খোয়াজা’।
এমন প্রেক্ষাপটে ২৭ বছর বয়সী কামিও নিজেকে একজন ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের নারী মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
” আমার জন্ম করাচিতে এবং আমি করাচিকে ভালবাসি। কারণ করাচি শহর পুরোটাই যেন ভালবাসাকে কেন্দ্র করে। আমরাও শিক্ষার্জন করেছি। আমরাও অন্যদের মত পাকিস্তানের জন্য কোনো কাজ করতে চাই। এখনো অন্যান্য শহরে অনেকেই পেছনে সমালোচনা করে, আমাকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে” বলেন কামি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বহুদিন ধরে এই ধরনের মানুষদের বলা হয় ‘খোয়াজা সিরা’ বা হিজড়া । কিন্তু কামি চান না তাকে সে হিসেবে ডাকা হোক।
করাচিতে খোয়াজ সিরা দলের সদস্যরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে নেচে নেচে জীবন ধারণে পথ খুঁজে নেয় ঐতিহ্যগতভাবে। কেউ কেউ যৌন কর্মী হিসেবেও কাজ করে। মোঘল আমলে ‘খোয়াজা সিরা’দের বেশ কদর ছিল।বেশ কয়েকজন ‘খোয়াজা সিরা’ সদস্য তাদের সম্পর্কে অনেক কথাবার্তা বলেন বিবিসির সাংবাদিকের সঙ্গে। নিজেরা কিভাবে বেড়ে উঠেছেন সেই গল্প করেছেন তারা।তারা মনে করেন, এখানে একজন গুরু থাকতেই হবে।”গুরু হলো মা-বাবা, অর্থাৎ আমাদের কাছে পিতা-মাতার সমতুল্য। চেলা হলো সন্তানের জন্য, শিষ্য” বলেন একজন।
আরেকজন বলেন “গুরু আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ যদি কোনো বিরোধী থাকে বা সমস্যা থাকে গুরু তা শুনবেন এং মধ্যস্থতা করবেন। আমরা বলি যার গুরু নেই তার কিছুই নেই”।অনেকের কাছে এ নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে।একজন যেমন বলছেন ” তারা কখনো নারী হতে পারে না। তারা সন্তান জন্ম দিতে পারে না। তারা যদি গুরু না মানে তাহলে তাদের কোনো পরিচয় নেই”।”তারা ভুয়া। তাদের গুরু না থাকলে তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই আমাদের কাছে। ইসলাম অনুসারে এটা ভুল। সৃষ্টিকর্তাই যদি আপনাকে নারী হিসেব সৃষ্টি করে না থাকে তাহলে কিভাবে আপনি নারী হবেন? আমরা নারী নই। আমরা তা-ই যেমনটা আল্লাহ আমাদের তৈরি করেছেন”।এই মানুষেরা চিরায়ত হিজড়ার ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তারা মনে করেন তৃতীয় লিঙ্গের নারী বা পুরুষ বলে কোনো কথা নেই। সবার পরিচয় তারা ‘খোয়াজা বা হিজড়া’।তৃতীয় লিঙ্গ নাকি হিজড়া -নিজেদের মধ্যেও পরিচয় নিয়ে বিরোধ আছে।এতদিন হিজড়া পরিচয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা তাই ‘তৃতীয় লিঙ্গের নারী’ বলে কোনো সত্তা থাকতে পারে তা-ও মানতে রাজি নন।
বাস্তবতা হচ্ছে, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের নিজেদের সম্পর্কে খুব একটা সম্মানজনক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।
তবে এখন সেই প্রেক্ষাপট থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা।
