এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রায় পুনর্বিবেচনা আবেদন (রিভিউ) করা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, ‘রায়ের পরবর্তী বিষয়ে সরকার নিশ্চয়ই আমাকে যে পরামর্শ দেবেন বা আদেশ দেবেন সে মতে আমি কাজ করবো।’
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশ করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর বিষয়টি নিয়ে এটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর আজ মঙ্গলবার সকালে ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। ওইদিন রায়ে বলা হয়, সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপক্ষে আনা আপিল খারিজ করা হয় (বাই ইউন্যানিমাস্ ডিসিশান দ্যা আপিল ইজ ডিসমিস্ড)।
রায় প্রকাশ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। হাইকোর্ট শুনানি করে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম। আপিলের শুনানি হয়েছে। পরে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। আজকে আমরা ওয়েবসাইট পুরো রায়ের কপি পেয়েছি। আপিল শুনানি সাতজন বিচারপতি শুনেছিলেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সবাই ঐক্যমত হয়েছেন। আলাদা কেউ রায় দেননি। রায়ে শেষ অংশে যেটা বলা হয়েছে, সেটা হলো সর্ব সম্মতিক্রমে আপিলটাকে ডিসমিস করেছেন।
এটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ে সংবিধানের ৯৬ এর (২) থেকে (৭) অনুচ্ছেদ পুন:স্থাপন করা হয়েছে। রায়ে বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট সম্পর্কে যে বিস্তারিত বর্ণনা আছে তার সঙ্গেও তারা একমত পোষন করেছেন। যদিও প্রধান বিচারপতি রায়ের এক জায়গায় অনুচ্ছেদ ১১৬ সম্পর্কে বলেছেন, এটা সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু রায়ের শেষাংশে যেখানে সবাই একমত হয়েছেন সেখানে অনুচ্ছেদ ১১৬ বিষয়ে কিছু পেলাম না। আমি বলবো এটা একজন জাজের অভিমত হতে পারে কিন্তু যেহেতু রায়ের শেষাংশে,যেটাকে অর্ডার অব দ্যা কোর্ট আমরা বলি। সেখানে ১১৬ সম্পর্কে বলা হয়নি। তাহলে ১১৬ বাতিল হয়েছে বলে ধরা যায় না।
মাহবুবে আলম বলেন, টোটাল বিষয়টি দাড়ালো যে মার্শাল ল’ আমলে সংবিধানের ৯৬ ধারা সংশোধন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে বিধান অন্তভূর্ক্ত করে সংশোধন করা হয়েছিল সেটিকে আবার পুনঃস্থাপন করা হলো।
এটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার বক্তব্য হলো সংবিধানের যে কোন ধারা। যেটা সংশোধন করা, বাদ দেয়া সবটাই সংসদের ব্যাপার। কোর্ট যদি নিজেই রেস্টর (পুনঃস্থাপন) করে দেন, তাহলে সংসদের থাকার কোন দরকার হয় না। আমার কথা হলো আদালত যে কোন সংবিধানের যে কোন সংশোধনকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু সংবিধানের কোন ধারা পুনঃস্থাপন বা রেস্টর করা আমার বিবেচনায় এটা সংসদের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘রায়টি নিয়ে সার্বিক কমেন্টস করতে হলে পুরো রায়টা পড়ে কমেন্টস করতে হবে। তবে আমার একটি দুঃখ রয়ে গেছে। সেই দুঃখ হলো সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদটি সংযুক্ত হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে। যখন আমাদের সংবিধান প্রণেতারা বসেছিলেন তারা এটা প্রণয়ন করেছিলেন। আর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কন্সেপ্টটা হলো সেনা শাসকদের কন্সেপ্ট, পাকিস্তানের কন্সেপ্ট, জিয়াউর রহমানের কন্সেপ্ট কাজেই এটা পুনঃস্থাপনে নিশ্চয় আমি ব্যথিত।’
