থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ‘হায়াও’ এর এক নারী ৯১ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে তাঁর জীবনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।দীর্ঘ দশ বছরের পড়া শেষে আজ ৯ই আগস্ট তিনি তাঁর স্নাতক ডিগ্রির সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।৯১ বছর বয়সী ‘নানী’ কিমলান জিনাকুল বলছেন “আমার মধ্যে সবসময় শিক্ষাগ্রহণের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ কাজ করতো। সবসময় ভাবতাম শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়স নেই, যে কোনো সময়েই এটা করা যায়”। আর এই নীতিতে বিশ্বাসী এই নারী সন্তান হারিয়েও, এই বয়সেও তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন।থাইল্যান্ডের সুখোথাই থাম্মাথিরাত ওপেন ইউনিভার্সিটির হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের একজন কিমলান জিনাকুল।তাঁর জীবনের আরেকটা বিশেষ দিন হতে যাচ্ছে ৯ই অগাস্ট বুধবার, এদিন তাঁকে স্নাতক ডিগ্রির সার্টিফিকেট প্রদান করবেন থাই রাজা ‘দশম রাম’।মিস কিমলান লামপাং প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি ফায়াও প্রদেশে বসবাস শুরু করেন।একজন বৃদ্ধ নারী হিসেবে কিমলানের প্রতিদিনের রুটিন ছিল-সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে তিনি যেতেন বুদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনার জন্য। এরপর প্রতিবেশী একটি মন্দির ঘুরে পড়ালেখার জন্য চলে যেতেন। ‘হিউম্যান এন্ড ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট’ নিয়ে পড়েছেন তিনি।ব্যাংককে তাঁর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন কিমলান।এই বিশ্ব কখনো থামে না। নিজস্ব গতিতে সে চলছে। আমাদের কাছে কাছে নতুন নতুন তথ্য আসছে, বিজ্ঞান ও গবেষণা নিত্যনতুন আবিষ্কার দেখছি। পুরনো সমস্যা সমাধানের জন্য সবসময় আমাদের সামনে নিত্যনতুন উপায় আসছে। যখন বিজ্ঞান-গবেষণায় নতুন কিছু আর থাকবে না, এই বিশ্বও থেমে যাবে” -নিজের চিন্তার কথা শেয়ার করলেন মিস কিমলান।
চীনা বংশোদ্ভুত পরিবারে জন্ম নেয়া কিমলান বেড়ে উঠেছেন লামপাং-এ। প্রদেশের শীর্ষ স্কুলে তিনি ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন।
কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর পরিবারে ব্যাংককে চলে আসতে বাধ্য হয় এবং সেখানেই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর নিজের পড়ালেখাটাও আবার শুরু করেন কিমলান।
“আমি সবসময় চাইতাম আমার ছেলেমেয়েরা যেন অনেকদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারে, যতদূর তারা পড়তে চায় ততদূর। আমার এই দৃঢ় ইচ্ছার কথা তাদের জানিয়েছি, তাদের সবসময় সমর্থন দিয়েছি”।পাঁচ সন্তানের মা কিমলানের চার সন্তানই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং একজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি করেন।
কিমলানের এক মেয়ে তাঁকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে উৎসাহ জোগায়। সুখোথাই থাম্মাথিরাত ওপেন ইউনিভার্সিটিতে তাঁর মেয়েই তাঁকে ভর্তি করেন।কিমলানের ওই মেয়ে চিয়াং মাই নামের একটা হাসপাতালে প্রভাষক ছিলেন এবং একইসঙ্গে সেখানকার নার্স হিসেবে কাজ করতেন। যদিও ৭২ বছর বয়সে কিমলান তাঁর পড়ালেখা আবারো শুরু করার কিছুদিন পরই তাঁর এই মেয়েটি মারা যায়।মেয়ের মৃত্যুর শোকে কয়েক বছর ক্লাস করেননি কিমলান।প্রায় এক দশক পর মেয়ের মৃত্যুর কষ্ট ভুলে পড়ালেখা শুরু করেন কিমলান। তখন তাঁর বয়স ৮৫ বছর।’হিউম্যান এন্ড ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়টি বেছে নেন কারণ তাঁর মতে এই বিষয়টা তাঁকে শেখাবে কীভাবে অর্থপূর্ণ ও হাসিখুশি জীবনযাপন করা যায়।”মেয়ের হারানোর দু:খ ভুলে আমি পুরোপুরি পড়ায় নিমজ্জিত হলাম। মনের মধ্যে শুধু এটা কাজ করতো-আমি স্নাতক পাশ করলে আমার মেয়ের আত্মা খুশি হবে” -বিবিসি থাই সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন কিমলান।
