ভারতের একটি সরকারি হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে ৬০টি শিশুর মৃত্যুর পর সেখানে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, হাসপাতালটি বিল পরিশোধ না করায় সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সব শিশু এ কারণেই মারা গেছে কিনা, তা পরিস্কার নয়।
উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন যে এই হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর সেখানে সংকট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এর কারণে কোন শিশুর মৃত্যুর কথা তারা অস্বীকার করছেন।স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এসময় আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল।
মারা যাওয়া বেশিরভাগ শিশু হয় নবজাতক বা এনসেফালাইটিসে ভুগছিল।উত্তর প্রদেশের গোরখপুর জেলার বাবা রাঘব হাসপাতালে গত পাঁচ দিনে এই ৬০টি শিশু মারা যায়। এর মধ্যে তিরিশটি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয় গত দুদিনে।জেলার কর্মকর্তা অনিল কুমার স্বীকার করেন যে হাসপাতালটিতে বিল পরিশোধ নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, হাসপাতালে অনেক রোগীকে যেহেতু গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল, তাই অনেক মৃত্যু এমনিতেও ঘটতে পারতো।উত্তর প্রদেশের গোরখপুর ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর একটি।রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীও এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকটের কারণে এসব মৃত্যু ঘটেছে।হাসপাতালটির অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করে দিয়ে এক তদন্ত শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর।জেলাশাসক গতকালই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় মারা গেছে ওই শিশুগুলি।তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে অন্য কারণও রয়েছে শিশুগুলি মারা যাওয়ার পেছনে। তবে কী সেই কারণ, তা নিয়ে একটি শব্দও বলা হচ্ছে না আনুষ্ঠানিকভাবে।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু তথ্য এবং নথি এসেছে, যেগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংস্থাটি একাধিকবার হাসপাতালকে বিল মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে। টাকা না মেটালে একটা পর্যায়ে যে তাদের পক্ষে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হবে না, সেটাও জানিয়েছিল তারা।যে ওয়ার্ডগুলিতে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে বর্ষার মরসুমে প্রচুর এনসেফেলাইটিস রোগাক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে। নবজাতকদের ওয়ার্ডেও মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকটি।শনিবার সকালে ওই ওয়ার্ডগুলিতে গিয়ে বিবিসি-র সংবাদদাতা দেখেছেন যে অনেক অভিভাবকই চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়ে অভিযোগ করছেন, আবার অনেকেই চোখের সামনেই বহু বাচ্চাকে মারা যেতে দেখেছেন। তবে একই সঙ্গে এটাও চোখে পড়েছে যে কয়েকটি শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া চলছিল শনিবার সকালে।
