নৈতিক বৈধতাহীন বর্তমান সরকার কর্তৃক দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াসের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্ট অতিসম্প্রতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে যে রায় প্রদান করেছেন তা নিয়ে ক্ষমতাসীন মহল ও একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিচার বিভাগ, রায় ও বিচারপতিদের সম্পর্কে যে সব অশালীন এবং বেআইনী বক্তব্য দিচ্ছেন ও অপতৎপরতা চালাচ্ছেন আমরা তার নিন্দা জানাচ্ছি। আজ সোমবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের জনগণ আওয়ামী সরকারের উস্কানীমূলক ও আক্রমনাত্বক বক্তব্যে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অতীতে বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ফাঁসির দ- ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জোর গলায় প্রচার করা হয়েছিল। এমনকি নিন্ম আদালতে সাজা ঘোষণার পর নজীরবিহীনভাবে আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়ার ভূমিকা পালন করেছে এ সরকার। স্কাইপ কেলেংকারী, ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন অনিয়ম ও কোন কোন বিচারকদের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও জ্ঞানী-গুণীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তাদেরকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রতিদিন ও প্রতিনিয়ত এ রায়ের বিরুদ্ধে চরম আক্রমনাত্মক ভাষায় বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারী দলের একজন আইনপ্রণেতা এবং সরকারী দলের আইনজীবী সংগঠনের নেতা সাংবাদিক সম্মেলন করে এই রায় সম্পর্কে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করে বলেন, ‘এ রায়ের ড্রাফটি (খসড়া) একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক লিখে দিয়েছেন।’ বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য কী আদালত অবমাননা নয়? জনগণের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কী অতীতে বাইরে থেকে রায় লিখে বিচারপতিদের সরবরাহ করা হত বলে যে সব কথা প্রচলিত আছে, তাই সঠিক? তাহলে কী ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়ার রায় যা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করে আজ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের এ দেশকে চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে ঐ রায়টিও বাইরে থেকে স্বার্থান্বেষী মহল লিখে দিয়েছিল?
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাক্ষাৎ করেছেন। প্রশ্ন জাগে আদালতের কোন রায়ে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষ সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন। এমনকি তারা সংক্ষুব্ধও হতে পারেন। এ জন্য এর প্রতিকার আদালতে চাওয়ার আইনগত এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া রয়েছে। কেউ আপীল বিভাগের রায়ের ব্যাপারে আদালতে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারেন। কিন্তু তা না করে কোন বিচারিক এবং আইনী পদ্ধতি অনুসরণ না করে সংসদের একজন আইনপ্রণেতা, সরকারের একজন মন্ত্রী এবং সরকারী দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির সাথে তার বাসভবনে সাক্ষাত করে তাদের ক্ষোভ এবং আপত্তির কথা জানালেন। এটি প্রকারান্তরে বিচার বিভাগের উপর সরকারের সরাসরি অবৈধ চাপ প্রয়োগের শামিল এবং আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ আপত্তিকর। এ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে আগামীতে বাদি-বিবাদিরা বিচার এবং রায়কে প্রভাবিত করার জন্য বিচারপতিদের বাসায় যাতায়াতের অবৈধ ও অবাধ সুবিধা পেয়ে যাবেন। এতে দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সর্বোচ্চ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বর্তমান সংসদের নৈতিক ভিত্তি নিয়ে যেখানে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানে সরকার রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পরিবর্তে তাদের গায়ের জোর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ পরিস্থিতি কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা মনে করি রায়কে কেন্দ্র করে যা কিছু হচ্ছে সবকিছুই বিচার বিভাগকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব আদালতের পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও। অথচ বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগে বিদ্যমান পরিস্থিতি জাতিকে ভয়ংকর উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ রায়কে কেন্দ্র করে সরকারী দল এবং তাদের আশীর্বাদপুষ্টরা যে সমস্ত বেআইনী, উস্কানীমূলক এবং আদালত অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করেছেন, আদালতের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হলে আদালতকে এ অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে এটিই সময়ের দাবি।
