প্রশান্ত মহাসাগরে এখন স্ট্রং বা প্রবল শক্তি সঞ্চয়কারী লা-নিনা সক্রিয় নয়। বঙ্গোপসাগরও খুব একটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। কেননা একটা বড় ধরনের বন্যার জন্য স্ট্রং লা-নিনা প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশসহ এসব অঞ্চলে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে মাঝারি গোছের বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে দেশ।
আমেরিকার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্যাসেফিক ইএনএসও এপ্লিকেশন ক্লাইমেট চেঞ্জ সেন্টারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রাশেদ চৌধুরী মোবাইল ফোনে গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে এসব তথ্য জানান।
ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে একটা বড় বন্যার জন্য প্রয়োজন দেশের ভেতরেই প্রচুর বৃষ্টিপাত। এর পরে সাগর থাকতে হবে অস্বাভাবিক উঁচু। অপর দিকে পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পুরো অববাহিকায় থাকতে হবে একযোগে পানি বাড়ার পরিমাণ। কিন্তু সাগর ও বায়ুমণ্ডলের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, এখন সাগর অনেকটা স্বাভাবিক আছে। আর দু-একদিন পরে বৃষ্টিপাতও কমে যাবে, তাই বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।
পানি বাড়ছে কেন : এ প্রসঙ্গে ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে পানি আসছে তেড়ে। আর সে পানি বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার চ্যানেল তো বাংলাদেশই। তা ছাড়া সাগরে এত দিন ধরে সক্রিয় এল নিনো ও লা-নিনা বর্তমানে নিউট্রাল পজিশনে আছে। এখন একটা টার্নিং পয়েন্ট। লা-নিনা এখন এল নিনোতে রূপান্তরিত হওয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে। যার কারণে আবহাওয়া অস্বাভাবিক একটা রূপ দেখা যাচ্ছে। এ জন্যও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তা ছাড়া এত দিন ধরে হয়ে যাওয়া লা-নিনার কারণে বাংলাদেশ ও তার আশপাশের অঞ্চলে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হতে পারে।
তবে যদি এখনকার নিউট্রাল অবস্থায় থাকা লা-নিনা আরো অধিক শক্তি সঞ্চয় করে একটি মাঝারি বা শক্তিশালী লা-নিনোয় পরিণত হয়, সে ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত ও বন্যার পরিমাণ অন্য রকম হবে, যা আসলে দেখা যাচ্ছে না। তাই বলা যায় বড় বন্যা হয়ত হবে না।
তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ওই সময়ে সাগর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উঁচু ছিল। ১৯৮৮ সালে সেপ্টেম্বরে দেশের নদ-নদীর ২৫টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয়। তা ছাড়া ওই সময়ে দেশের প্রায় ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার বন্যায় তলিয়ে যায়। ৫২টি জেলা ওই সময়ে বন্যায় আক্রান্ত হয়। আর ঢাকা দু-মাস ধরে এক থেকে তিন মিটারের মতো পানিতে ডুবে ছিল। প্রায় একই অবস্থা ছিল ১৯৯৮ সালে।
তিনি বলেন, ১৯৫১, ১৯৫৮, ১৯৭২, ১৯৮২ ও ১৯৯৭ সালে এল নিনোর প্রভাবে খড়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। আবার কোনো শক্তিশালী লা-নিনার প্রাদুর্ভাব দেশে সাধারণত অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়। অপর দিকে ১৯৬৪, ১৯৭৩, ১৯৭৫, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে লা-নিনার কারণে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়। আবার কখনো মাঝারি শক্তিশালী এল-নিনো বছরেও অধিক বৃষ্টি বা বন্যা হয়ে থাকে। ১৯৭৪ ও ১৯৮৭ সালে এ কারণে এখানে অধিক বৃষ্টি ও বন্যা হয়।
বৃষ্টিপাত কমছে : এ দিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী দু-একদিন বৃষ্টিপাত থাকবে। তা ছাড়া অমাবস্যার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা একটু বেশি থাকবে। তবে তিন অববাহিকায় বৃষ্টিপাত কমে যাবে।
এ দিকে বিবিসির এক আবহাওয়ায় বার্তায় দেখানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিন ভাতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মারাত্মক বৃষ্টিপাত হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলে মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
