প্রবল বন্যার কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন নেপালের জন্য এক মিলিয়ন ডলারের মানবিক সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। হিমালয়ান দেশটির সাথে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে সহযোগিতাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করার কয়েক দিনের মধ্যে এই ঘোষণা দেয়া হলো।হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলে এবং তরাই মালভূমিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সম্পদ অনুসন্ধান এবং সম্ভাব্যতা নিরীক্ষণে চীনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছিল চুক্তির মূল বিষয়। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোদারি হাইওয়ে মেরামত ও পুনর্নির্মাণে চীন নেপালকে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে। এছাড়া ২০১৭ সালকে চীন তাদের পর্যটকদের জন্য নেপালে ভ্রমণের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে।নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার নয়াদিল্লি সফরের আগ মুহূর্তে চীনের এই উদ্যোগ ভারতকে বেশ উদ্বিগ্ন করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে চীনের এ ধরনের প্রস্তাবের কৌশলগত তাৎপর্য আছে। এতে ২০১৫ সালের নেপালের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের পর থেকে ভারত ভাবমূর্তি উদ্ধারের যে চেষ্টা চালাচ্ছে চীনের তৎপরতায় তা আরো পিছিয়ে যেতে পারে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, চীনের ‘চেক-বই কূটনীতি’ এবং চীন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভ’র ‘আগাম ফসল’ পেতে যাচ্ছে নেপাল। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের খেলা শুরু হয়ে গেছে।জওহরলাল নেহরুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বরণ সিং স্পুটনিককে বলেন, ‘নেপালের সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে কোনো প্রাথমিক অনুমান ছাড়াই চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াং একটি বড় ধরনের সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে নেপালে সফর করেছেন। চীনের রীতি এমনই। ২০১৫ সালে ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়ার ১৭শতকের বিশ্ব ঐতিহ্য প্যাগোডা পুনঃনির্মাণ অথবা কাঠমান্ডু ও লাসার (চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বতের শহর) সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা।’সিং আরো বলেন, ‘২০১৫ সালের অবরোধের পর থেকে ভারত নেপালে তাদের সুনাম হারিয়েছে এবং চীন এই অসন্তোষের সুবিধা নিয়ে তার স্বার্থে কাজ করে চলছে।’এশিয়ার দুই বড় দেশের মাঝে হিমালায়ান রাষ্ট্র নেপাল বরাবরই উভয়শক্তি থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে কাউকে অসন্তুষ্ট না করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।তবে ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণের পর থেকে ভারতের সঙ্গে দেশটির দূরত্ব বাড়াছে। ভারত বলছে যে নতুন সংবিধান মাধেশি জনগণকে (যাদের সাথে ভারতের সীমানাবর্তী রাজ্যগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে) সমান অধিকার দেয়া হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত নেপালের বিরুদ্ধে একটি অঘোষিত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে।এদিকে চীনের ‘অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগ’-এর কারণে নেপাল বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে চীন-নেপাল সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে। ২০১৬ সালে চীন নেপালের শীর্ষস্থানীয় সাহায্যদাতা হিসাবে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। ভারত ও চীনের মধ্যে দোকলাম নিয়ে বর্তমান অচলাবস্থা চলছে। তবে এই ইস্যুতে নেপালে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বেছে নিয়েছে।
সাউথ এশিয়ান মনিটর অবলম্বনে
