২০০৬ থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টুর্নামেন্টে জিততে পারেনি শিরোপা। দু’বার সুযোগ এসেছিল। দেশের মাটিতে ২০১৬ তে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হেরে যায় টাইগাররা। দ্বিতীয় সুযোগ আসে ২০১৮তে শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত নিদাহাস ট্রফিতে। সেবারও ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারতের কাছে হেরে দেশে ফেরে টাইগাররা। আজ বাংলাদেশ দলের সামনে ফের সুযোগ এসেছে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেই এ মাইলফলক স্পর্শ করবে দল। নিজ দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই জয় কুড়ায় সাকিব আল হাসানের দল। কিন্তু শক্ত প্রতিপক্ষ আফগানদের বিপক্ষে হেরে যায় প্রথম ম্যাচে। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় ফাইনাল খেলা। ফাইনালের আগে দারুণ এক মহড়াই হয়েছে রশিদ খানের দলের বিপক্ষে। ৫ বছর পর আফগানদের হারিয়ে আত্মবিশ্বাসও দারুণভাবে ফিরে পেয়েছে সাকিব বাহিনী। আজ সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ধরা দেবে অধরা শিরোপা। দলের নয়া প্রথম কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও জানিয়েছেন শতভাগ দিয়ে খেলতে পারলে বাংলাদেশ যে কোনো দলকেই হারাতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের ভালো খেলতে হবে আমাদের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়েই খেলতে হবে। আমরা ৬০-৭০ ভাগ খেললেই জিতে যাবো এমনটা ভাবার কারণ নেই। তবে আফগানিস্তানকে যদি তাদের ৬০-৭০ ভাগের মধ্যে আটকে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
টি-টোয়েন্টি ফরমেটে আফগানিস্তান ভালো দল। আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান এখন সপ্তম স্থানে। বাংলাদেশ রয়েছে তাদের চেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে দশম স্থানে। আফগানরা লেগ স্পিন ও পেশীশক্তিতে বলিয়ান। তাদের দলে রয়েছে বর্তমান বিশ্বের সেরা লেগি রশিদ খান অন্যজন তরুণ অফস্পিনার মুজিব উর রহমান। এই দুই স্পিনারের বিপক্ষে রয়েসয়ে খেলার কথা জানালেন বাংলাদেশের কোচ ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘ওদের স্পিনারদের বিপক্ষে অনেক ব্যাটসম্যানই ধুঁকে থাকে। মুজিব ও রশিদ এখন স্পিনে অনেক বড় নাম। শুধু আমাদের ব্যাটসম্যান নয়, বিশ্বমানের এই দুই স্পিনারের বিপক্ষে ভোগান্তি হয় অন্যদেরও। আমরা নেটে চেষ্টা করছি ওদের খেলার উপায় বের করতে। মানসিকতা নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু রাতারাতি আয়ত্ত করা সম্ভব নয়।’
শেষ ম্যাচে আফগানদের ১৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪ উইকেটে জেতে সাকিব আল হাসানের দল। সেই ম্যাচেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল টাইগাররা। অধিনায়ক সাকিব ৭০ রানের ইনিংস না খেললে হয়তো হারই জুটতো। শেষ দিকে ১৮ বলে যখন ২৭ রান প্রয়োজন তখন রশিদ খানের ওভারে মোসাদ্দেক ও সাকিব ১৮ রান তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। এতে হয়তো রশিদকে নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের যে ভীতি ছিল তা খানিকটা দূর হয়েছে। তবে দলের অন্যতম চিন্তা এখনো ব্যাটিং। বিশেষ করে ওপেনাররা দলের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ। অভিজ্ঞ লিটন দাসও ধারাবাহিক নয়। কোচ অবশ্য শান্তকে একটু সময় দিতে চাইছেন। তার মতে এই তরুণের মধ্যে ভালো কিছুর সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে শেষ ম্যাচে দলের জন্য বল হাতে বড় সাফল্য এনে দিয়েছে পেসাররা। তিন পেসার তিনটি করে উইকেট পেলেও আফগান ব্যাটসম্যানরা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেনি। যে কারণে ফাইনালেও পেস আক্রমণ সাজানোর ইঙ্গিতই ডমিঙ্গোর। তিনি বলেন, ‘অবশ্য চারজন পেসার নিয়ে খেলার কথা ভাববো। তার আগে আমাকে উইকেট ও কন্ডিশন দেখতে হবে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে আমিও চিন্তা করবো চার অথবা তিন পেসার নিয়ে খেলার কথা।’ দলে চার পেসার খেললে সাব্বির রহমান বাদ পড়তে পারেন একাদশ থেকে। তার পরিবর্তে সুযোগ পেতে পারেন রুবেল হোসেন।
মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে আফগানদের বিপক্ষে শেষ জয় এসেছিল ২০১৪ সালে। এরপর এই মাঠে দ্বিতীয় দেখা হয় চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে। সেই ম্যাচে টাইগাররা ২৫ রানে হেরে যায় ক্রিকেটে নবীন দলটির বিপক্ষে। এর আগে চট্টগ্রামে একমাত্র টেস্টে বড় ব্যবধানে আফগানিস্তানের কাছে পরাজিত হয়েছিল সাকিব বাহিনী। তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে মরিয়া হয়ে আছে তারা।