বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনোভাবে রাজনীতিকরণ করা না হয়: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আমি চাইবো বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনোভাবে রাজনীতিকরণ করা না হয়। এখানে বিচারক ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের সম্মিলিত ও মেধাপুষ্ট দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই কেবল সুবিচারের লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে এবং তবেই বিচার বিভাগের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। আমাদের সুপ্রীম কোর্টের এই বিচার অঙ্গন পারস্পরিক সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসায় আলোকিত হোক এটিই আমার প্রত্যাশা। একটি কথা একটু অপ্রিয় হলেও বলতে চাই, কোনো বিষয়ে ভালভাবে না জেনে বা যথেচ্ছভাবে বিচারক ও আদালত সম্পর্কে কটু মন্তব্য মোটেই সভ্যতার ইঙ্গিত বহন করে না।

রবিবার আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে সংর্বধনার অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব হাবিবুর রহমানের ভাষায় আমিও উচ্চারণ করতে চাই- কোনো বিচারকই সমালোচনার উর্ধ্বে নন। সভ্য জগতে ভব্য সমালোচনার একটা অবকাশ রয়েছে। বিচারকের রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাকস্বাধীনতার অংশ বলে আমি মনে করি। আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সংবিধানে এই বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেছিলেন, দেশে যে মুক্ত সাংবাদিকতা বিরাজ করছে তার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে যথেচ্ছ সমালোচনার পরিবর্তে জেনেশুনে ওয়েল ইনফরমড হয়ে সমালোচনার প্রয়োজন। তবে কেউ যদি স্বাধীনতার অপব্যবহার করে তা সংবাদমাধ্যমই হোক, আইনজীবীই হোক বা যে কেউ হোক তাকে শায়েস্তা করার জন্য আদালতের হাত যথেষ্টই লম্বা।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিচার প্রশাসনকে রাখতে হবে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন এবং সোশ্যাল জাস্টিস তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা দেশ ও জাতির জন্য গর্বের।

আমার দায়িত্ব পালনকালে আমার সতীর্থ বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ এবং আপনারা বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দের সুচিন্তিত পথ ধরে একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। আমি আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে একটি দীর্ঘ মেয়াদী জুডিসিয়াল প্ল্যান তৈরি করতে চাই। আমার উত্তরসূরিগণ যেন এই প্ল্যান বা পরিকল্পনা ধরে আগামীতে এগিয়ে যেতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলাজট এবং বিলম্বিত বিচার প্রকারান্তরে সুবিচারের ধারণাকে বিনষ্ট করে। কিভাবে এটি থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত করা যায় সেই কার্যকর পথ ও প্রক্রিয়া বের করতে হবে। একই সাথে এটিও বলি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রের সকল স্টেট ম্যাশিনারিজেরও দায়িত্ব রয়েছে। মনে রাখতে হবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সাথে সুশাসনের ধারণাটি সম্পৃক্ত। মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের
শাসনের মূল উপাদান হলো এ বিচার ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান গত ২৬ সেপ্টেম্বর শপথ নিয়েছেন। ওইদিন সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ওবায়দুল হাসানকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। (মানবজমিন)